Friday, November 15, 2019

ইমামের পিছনে সূরা ফাতেহা পাঠ করা যাবে কি ?


ইমামের পিছনে সূরা ফাতেহা পাঠ করা যাবে কি ?
দেওবন্দী শায়খুল হাদীছ সফদর খান এটা মেনে নিয়েছেন যে, হযরত উবাদাহ ইবনু সামিত রাযিঃ ইমামের পিছনে সূরা ফাত্বিহা পড়তেন এবং এর উপরেই অটল ছিলেন। কিন্তু সাহাবীর বুঝ (আমল) উনার নিকট হুজ্জাত তথা দলীল নয়। (নাউযুবিল্লাহ্) কি বিশ্বাস হচ্ছেনা? নাকি হক্বের ঝান্ডাবাহীগণের এরূপ আচরণ দেখে মাথা চুলাকাচ্ছে? অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগবে, এটা কি কখনো হতে পারে? যারা সাহাবা সাহাবা করে গলা ফাটায় তারাই আবার এমন কথা (ফাতওয়া) বলতে পারে? জ্বী জনাব, পারে। দেখে নিন......
দেওবন্দীদের শায়খুল হাদীছ সফদর খান বলেছেন, হযরত উবাদাহ ইবনু সামিত রাযিঃ ইমামের পিছনে সূরাতুল ফাত্বিহা পড়তেন এবং এটাই উনার তাহক্বীক, মাসলাক এবং মাযহাব ছিল। কিন্তু আমাদের নিকট সাহাবীর বুঝ এবং সাহাবীর মওকুফ বর্ণনা হুজ্জাত তথা দলীল নয় নয়। (আহসানুল কালাম, ২/১৫৬)।
এবার আসুন দেখি উবাদাহ ইবনু সামিত রাযিঃ-র তাহক্বীক, মাসলাক এবং মাযহাব কিসের উপর প্রতিষ্ঠিত?
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لاَ صَلاَةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ.
‘উবাদাহ ইবনু সামিত (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি সালাতে সূরাহ্ আল-ফাতিহা পড়ল না তার সালাত হলো না। (বুখারী ১/১০৪ হা/৭৫৬, মুসলিম ৪/১১, হাঃ ৩৯৪, আহমাদ ২২৮০৭, তিরমিযী হা/২৪৭, আল মুগনী ১/৫৫৫, মুসান্নাফে ইবনু আবী শাইবাহ ১/৩১৬, মানারুস সাবীল ১/৮৫, আল জামউ বাইনাস সহীহাইন ১/২৫৬, আল বাহরুর রাঈক ১/৩১২, আল উদ্দাহ শারহ উমদাহ ১/৫৬, ইবনু খুযায়মাহ ৩/৩৫, দারাকুতনী ১/৩২১, জামিউল আহাদীস হা/১৭১৫৭-৩৮২০৮ সহ আরও অসংখ্য কিতাবে হাদীছটি রয়েছে)।
অত্র হাদীছটি আ'ম তথা ব্যাপক। সালাত ফরয হোক বা নফল, ঐ ব্যক্তি ইমাম হোক বা মুক্তাদি অথবা একাকী হোক অর্থাৎ কোনো ব্যক্তির কোন সালাতই সূরা ফাত্বিহা পাঠ ব্যতীত শুদ্ধ হয়না। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, উবাদাহ ইবনু সামিত রাযিঃ-র বুঝ, আমল, মাসলাক এবং মাযহাব আল্লাহর রাসূল সাঃ এর দেখানো সিরাতুল মুস্তাকিমের উপর প্রতিষ্ঠিত। ফালিল্লাহিল হামদ্।
সম্মানিত পাঠক! এবার আসুন দেখি অত্র হাদীসের বুঝ আইম্মায়ে কেরামগণ কি বুঝেছেন?
→ আল্লামা কাস্তালানী রাহিঃ বুখারীর শারহতে (২/৪৩৯) অত্র হাদীছের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন-
أي في كل ركعة منفردا أو إماما أو مأموما سواء أسر الامام أو جهر.
এ হাদীছের উদ্দেশ্য হল প্রত্যেক রাকাআতে মুসল্লী একা হোক বা ইমাম অথবা মুক্তাদি হোক, ইমাম নীরবে তেলাওয়াত করুক বা উচ্চস্বরে; সূরা ফাত্বিহা পাঠ করা আবশ্যক।
→ আল্লামা কিরমানী রাহিঃ বলেন-
وفي الحديث (اي حديث عبادة) دليل على أن قرأة الفاتحة واجبة على الامام والمنفرد والمأموم في الصلوات كلها.
উপরে উল্লেখিত উবাদাহ ইবনু সামিত রাযিঃ-র হাদীছ প্রমাণ করে যে, সমস্ত সালাতে সূরা ফাত্বিহা পাঠ করা আবশ্যক চাই সে ইমাম হোক বা একাকী অথবা মুক্তাদি হোক। (উমদাতুল ক্বারী শারহ সহীহুল বুখারী ৩/৬৩)
→ আমীরুল মু'মিনীন ফিল হাদীছ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বুখারী রাহিমাহুল্লাহ্ নিম্নরূপ অধ্যায় রচনা করে এই মাস'আলার ব্যাখ্যা করেছেন-
بَاب وُجُوبِ الْقِرَاءَةِ لِلْإِمَامِ وَالْمَأْمُومِ فِي الصَّلَوَاتِ كُلِّهَا فِي الْحَضَرِ وَالسَّفَرِ وَمَا يُجْهَرُ فِيهَا وَمَا يُخَافَتُ.
সব সলাতেই ইমাম ও মুক্তাদীর কিরাআত পড়া জরুরী, মুকীম অবস্থায় হোক বা সফরে, সশব্দে কিরাআতের সলাত হোক বা নিঃশব্দে সব সলাতেই ইমাম ও মুক্তাদীর কিরাআত পড়া জরুরী। (বুখারী ১/১০৪)। এছাড়াও ইমামুল মুহাদ্দিসীন বুখারী রাহিমাহুল্লাহ্ "জুযউল ক্বিরাত খালফাল ইমাম" নামে একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন। এ গ্রন্থে লেখক অতি চমৎকারভাবে প্রতিপক্ষের দলীল ও যুক্তি প্রমাণগুলোর জবাব প্রদান করেছেন। 
★ বইটির ডাউনলোড লিংক: https://www.mediafire.com/download/7jxbsknnfv219v9
→ ইমাম মুসলিম রাহিঃ সহীহ মুসলিমের অধ্যায় কায়েম করেছেন এইভাবে-
باب وُجُوبِ قِرَاءَةِ الْفَاتِحَةِ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ وَإِنَّهُ إِذَا لَمْ يُحْسِنِ الْفَاتِحَةَ وَلاَ أَمْكَنَهُ تَعَلُّمُهَا قَرَأَ مَا تَيَسَّرَ لَهُ مِنْ غَيْرِهَا
প্রতি রাকাআতে সূরাহ ফাত্বিহা পড়া অপরিহার্য, কেউ যদি (ভালভাবে) সূরাহ ফাত্বিহা পড়তে বা শিখতে সক্ষম না হয়, তবে সে যেন তার সুবিধামত স্থান থেকে কিরাআত পাঠ করে নেয়। অতঃপর তিনি উবাদাহ ইবনু সামিত রাজিঃ-র হাদীছ নিয়ে এসেছেন। (সহীহ মুসলিম হা/৭৬০)
→ আল্লামা কাসতালানী রাহিঃ শারহ বুখারীর (২-৪৩৫) বলেছেন- অধিকাংশ সাহাবা, তাবেঈন ও ইমাম উলামার অভিমত এটাই (সালাতে সূরা ফাত্বিহা পাঠ করা)।
→ আল্লামা আইনী হানাফি রাহিঃ বলেন,
استدل بهذا الحديث عيد الله بن المبارك والأوزاعي ومالك والشافعي وأحمد وإسحاق وأبو ثور وداود على وجوب قراءة الفاتحة خلف الامام في جميع الصلوات.
উবাদাহ ইবনু সামিত রাযিঃ-র হাদীছ থেকে ইমাম আব্দুল্লাহ বিন মুবারক, ইমাম আওযাঈ, ইমাম মালিক, ইমাম শাফেঈ, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক, ইমাম আবূ সাওর ও ইমাম আবি দাউদ রাহিমাহুল্লাহ্ গণ ইমামের পিছনে সকল সালাতে মুক্তাদির জন্যে সূরা ফাত্বিহা পড়া ওয়াজিব হওয়ার স্বপক্ষে দলীল হিসেবে গ্রহন করেছেন। (উমদাতুল ক্বারী শারহে সহীহ বুখারী ৩/৬৪ পৃষ্ঠা)
→ ইমাম নববী রাহিঃ বলেন, যে ব্যক্তি সূরা ফাত্বিহা পাঠ করতে পারে তার জন্য তা পাঠ করা সালাতের ফরয সমূহের মধ্যে একটি ফরয কাজ এবং সালাতের রুকন সমূহের মধ্যে একটি রুকন। আর সূরা ফাত্বিহা সালাতের জন্য এমনই একটি নির্ধারিত বিষয় যে, এর স্থলে অন্য কোন ভাষার অনুবাদ গ্রহণযোগ্য হবেনা এবং কুরান মাজীদের অন্য কোন সূরাও এর স্থলাভিষিক্ত হতে পারবেনা (অর্থাৎ এর চাহিদা পূরণ করতে পারবেনা)। আর এই সূরা সকল প্রকার সালাতের জন্য নির্ধারিত বিষয়; তা ফরয হোক বা নফল, ক্বির'আত নীরবে হোক বা সরবে, পুরুষ হোক বা মহিলা, মুসাফির, অপ্রাপ্ত বয়স্ক, দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারী বা বসে অথবা শুয়ে, ভয়ের অবস্থায় বা নিরাপদ অবস্থায়। আর ফাত্বিহা পাঠ নির্ধারিত হওয়ার ক্ষেত্রে ইমাম-মুক্তাদি এবং একাকী সালাত আদায়কারী ব্যক্তি একই বরাবর। (আল-মাজমূ' শারহ মুহায্-যাব ৩/৩২২, মিসরী ছাপা)।
→ আল্লামা সিন্ধী হানাফি রাহিঃ বলেন-
والحق أن الحديث يفيد بطلان الصلان رذا لم يقرأ فيها بفاتحة الكتاب. أفاد الحديث نفي الوجود الشرعي للصلوة التي لم يقرأ فيها بفاتحة الكتاب وهو عين نفي الصحة.
সঠিক কথা এই যে, উবাদাহর (রাযিঃ) হাদীছটি প্রমাণ করে সালাতে সূরা ফাত্বিহা পাঠ না করলে সালাত বাতিল হবে এবং এও প্রমাণ করে, যে সালাতে সূরা ফাত্বিহা পড়া হয়না তা সালাতের শারঈ অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। (বুখারীর হাশিয়া ১/৯৫)
→ এছাড়াও দেখুন-
১) আল্লামা মুহাম্মাদ বিন আলী শাওকানী, নাইলুল আওতার ২/২১৭, ২/২২০পৃষ্ঠা।
২) ফাতহুল বায়ান ৩/৪২৮।
৩) গায়াতুল মা'মুল শারহ আত-তাজুল জামে ১/১৮৬ পৃঃ।
৪) হাফেজ ইবনু আবদুল বার্র রাহিঃ- কোন মুক্তাদিই যেন ইমামের পিছনে সূরা ফাত্বিহা পাঠ ছেড়ে না দেয়। (তাহকীকুল কালাম ৯পৃঃ)
৫) মাওলানা সাইয়েদ আহমাদ হাসান দেহলবী হাশিয়ায়ে বুলুগুল মারাম ১/৪৬ (অমৃতসর ছাপায়) লিখেছেন-
والحديث يدل على تعين فاتحة الكتاب في الصلات وعلى أن لا تقبل صلوة لا يقرأ فيها بأم القران كما في روايه أحمد وإليه ذهب جمهور العلماء من الصحابة واتابعين فمن بعدهم.
অত্র হাদীছ সূরা ফাত্বিহা পাঠ নির্ধারিত হওয়া প্রমাণ করে। আর এটাও প্রমাণ করে যে, যে সালাতে সূরা ফাত্বিহা পড়া হয়না সে সালাত কবূল হয়না। যেমনটি মুসনাদে আহমাদে আছে যে, অধিকাংশ সাহাবা (রাযিঃ আনহুমা আযমাঈন) তাবেঈন (রাহিঃ) এবং তাদের পরবর্তী আলিমগণের অভিমত এটাই।
৬) ইমাম আবু ঈসা রাহিঃ আহমাদ মুহাম্মদ শাকির মিসরী রাহিঃ-র তা'লীকসহ তিরমিযী ২/২৬ এ বলেন-
ইমামের পশ্চাতে সূরা ফাত্বিহা পাঠের ব্যাপারে সাহাবাগণেত অধিকাংশ বিদ্বান- তন্মধ্যে উমার ইবনুল খাত্তাব, আলী ইবনু আবী তালিব, জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ, ইমরান ইবনু হুসাইনসহ অন্যান্য সাহাবা বলেছেন, কোন প্রকার সালাতই সূরা ফাত্বিহা ব্যতীত বিশুদ্ধ হবেনা। এছাড়া ইমাম ইবনুল মুবারক, ইমাম শাফেঈ, ইমাম আহমাদ এবং ইমাম ইসহাক রাহিঃও এরকমই বলেন।
৭) হাফেয ইবনু হাজার আসকালানী রাহিঃ বলেছেন,
وقد ثبت الاذن بقراءة المأموم الفاتحة في الجهرية بغير قيد.
কোন প্রকার শর্ত ছাড়াই সরব সালাতে মুক্তাদির জন্য সূরা ফাত্বিহা পাঠ করা প্রমাণিত। (ফাতহুল বারী ২/২০১)
৮) মাওলানা আবদুল হাই লাখনৌভি হানাফি রাহিঃ বলেছেন,
وقد ثبت بحديث عبادة وهو حديث صحيح قوي السند أمره صلى الله عليه وسلم بقراءة الفاتحة للمقتدي.
সহীহ ও শক্তিশালী সূত্রে বর্ণিত 'উবাদাহ ইবনু সামিত রাযিঃ'-র হাদীছ দ্বারা মুক্তাদির জন্য সূরা ফাত্বিহা পাঠ বিষয়ে রাসূল সাঃ এর নির্দেশ প্রমাণিত হয়েছে। (সি'আয়াহ ৩০৩ পৃষ্ঠা)
★ হানাফি মাযহাব হতে সালাতে সূরা ফাত্বিহা পাঠের প্রমাণ:
→১) ইমাম আবু হানিফা রাহিঃ ও ইমাম মুহাম্মাদ রাহিঃ এর দুটো অভিমতের মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে তা ওয়াজিবও নয় সুন্নাতও নয়। কিন্তু উনারা তাদের এ মত হতে প্রত্যাবর্তন করে নিমোক্ত অভিমত পেশ করেছেন-
"সন্দেহমুক্ত হওয়ার জন্য মুক্তাদির পক্ষে সূরা ফাত্বিহা পড়া উত্তম এবং নীরব সালাতে ফাত্বিহা কোন নিন্দনীয় বিষয় নয়। কেননা, মারফু হাদীছে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাঃ মুক্তাদি সাহাবীগণকে লক্ষ্য করে বলেন- সূরা ফাত্বিহা ছাড়া কিছুই পড়বেনা। অন্য বর্ণনায় রয়েছে- আমি যখন উচ্চস্বরে পাঠ করবো তখন তোমরা সূরা ফাত্বিহা ব্যতীত কিছু পড়বে না। (ইমামুল কালাম ১৫৬ পৃষ্ঠা) এ সম্পর্কে আরও জানতে দেখুন- দুর্রে মুখতার মা'আ রাদ্দুল মুহতার ১/৫০ পৃঃ। ইমাম আব্দুল ওয়াহহাব শা'রানী রাহিঃ বলেন-
প্রকৃতপক্ষে ইমাম আবু হানিফা রাহিঃ-মাযহাব ও অভিমত সেটাই যা তিনি বলার পর মৃত্যু পর্যন্ত তা হতে ফিরে আসেননি মানে মত পরিবর্তন করেননি। (মিযানে কুবরা ১/৭৩, দিল্লী ছাপা)
সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, ইমাম আবু হানিফা রাহিঃ-র মতে ইমামের পিছনে সূরা ফাত্বিহা পাঠ জায়েয। ফালিল্লাহিল হামদ্।
→২) ইমাম নববী রাহিঃ বলেন,
ইমাম আবু হানিফা রাহিঃ-র মতে মুক্তাদির পক্ষে ইমামের পিছনে সূরা ফাত্বিহা পড়া মুস্তাহাব। অন্য বর্ণনায় রয়েছে ওয়াজিব। (শারহ মুহাযযাব ৩/৩২৭ পৃষ্ঠা)
→৩) কিতাবুল ফিক্বহ্ আলাল মাযহাবিল আরবা'আহ (১/১২৯) ১ম মুদ্রণে আছে-
হানাফিয়্যাদের মতে মুক্তাদিকে ইমামের পিছনে সূরা ফাত্বিহা পড়া ওয়াজিব। আবার একে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহও বলতে পারো।
→৪) হানাফি মাযহাবের প্রসিদ্ধ গ্রন্থ উসূলে শা'শীর ৩৮ পৃষ্ঠায় আছে-
হাদীছের আলোকে সূরা ফাত্বিহা পড়া ওয়াজিব। আর ৬নং হাশিয়ায় আছে-
কার্যতঃ হাদীছ দ্বারা সূরা ফাত্বিহা পাঠ প্রমাণিত।
→৫) ইমাম আবু হানিফা রাহিঃ ও ইমাম মুহাম্মাদ রাহিঃ হতে ইমামের পিছনে সূরা ফাত্বিহা পাঠ সম্পর্কে বর্ণিত আছে-
কোন সমস্যা নেই। (মিসকুল খিতাম শারহ বুলুগুল মারাম ১/১১৯ নিজামী ছাপা, জামিউর রূমূজ ৭৬ পৃষ্ঠা)
→৬) ইমাম আবু হানিফা রাহিঃ-র মতে,
যোহর এবং আসর সালাতে সূরা ফাত্বিহা এবং কুর'আন থেকে যা ইচ্ছা তা পাঠ করাতে কোনো দোষ নেই। (মিসকুল খিতাম ১/২১৯ পৃষ্ঠা)
→৭) আনওয়ার শাহ্ কাশ্মিরী রাহিঃ মুকাদ্দামাহ গাজনাবীতে বর্ণনা করেন-
আমাদের কতক সহচর ইমামের পিছনে নিঃশব্দ সালাতে (সূরা ফাত্বিহা) পাঠকে পছন্দ করেছেন। এটাই ইমাম আবু হানিফা রাহিঃ-র প্রথম মত। (ফাসলুল খিতাব বার হাশিয়া আলা কিতাবিল মুসতাতাব ২৯৮ পৃষ্ঠা)
→৮) হানাফি মাযহাবের নির্ভরযোগ্য কিতাব হেদায়ায় উল্লেখ আছে-
ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরা ফাত্বিহা পড়া উত্তম এবং সুন্দর কাজ। এ উক্তি ইমাম মুহাম্মাদ হতে বর্ণিত। (হেদায়া ১/১০১ পৃষ্ঠা)
→৯) মাওলানা আবদুল হাই লাখনৌভি হানাফি রাহিঃ লিখেছেন-
সম্ভবত এ মাস'আলার বিষয়ে ইমাম শাফেঈর (রাহিঃ) কথাই সঠিক। এজন্য সন্দেহমুক্ত হওয়ার জন্য ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরা ফাত্বিহা পড়ে নেওয়ায় উত্তম। (হাশিয়ায়ে হেদায়া ১/১০১)
→১০) ইমাম আল্লামা আইনি হানাফি রাহিঃ বলেন-
আমাদের কতক হানাফি ফক্বিহ্ সকল সালাতে ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরা ফাতিহা পাঠ করাকে উত্তম জানতেন। (উমদাতুল ক্বারী শারহ সহীহ বুখারী ৩/২৯)
→১১) মোল্লা জীওন হানাফি রাহিঃ (যিনি বাদশাহ আলমগীরের শিক্ষাগুরু ছিলেন) লিখেছেন- সূফিয়ে কিরাম ও হানাফি মাশায়েখকে দেখলে জানা যাবে যে, তারা সকলেই ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরা ফাত্বিহা পাঠ করাকে উত্তম ও সুন্দর জানতেন। যেমন ইমাম মুহাম্মাদ রাহিঃ একে সুন্দর (মুহতাহসিন) বলেছেন। (তাফসীরে আহমাদী ২৮১ পৃষ্ঠা)
→১২) শায়খ মুহাম্মাদ আরশাদ জৌনপুরী (মৃত ১১১৩ হিঃ) ও শায়খ মুহাম্মাদ উসমান জৌনপুরী (মৃত ১০৮৩ হিঃ) উভয়ই ইমামের পিছেন সূরা ফাত্বিহা পাঠ করতেন। (নুযহাতুল খাওয়াতির ২/২৭২, ৫/৩৬৫)
→১৩) শামসুদ্দীন মীর্জা মাযহার জানে জানাঁ রাহিঃ ইমামের পিছনে সূরা ফাত্বিহা পাঠের অভিমতকে শক্তিশালী বলতেন। (মিসকুল খিতাম ১/২১৯) এমনকি তিনি বুকের উপর হাত বাঁধতেন ও তাশাহুদে বসে তর্জনী আংগুল দ্বারা ইশারা করতেন। যদিচ তিনি হানাফি ছিলেন। (তিকসার ১১৩ পৃষ্ঠা)
→১৪) শায়খ হাসান আজমী হানাফি রাহিঃ ইমামের পিছনে সূরা ফাত্বিহা পাঠ করতেন। (ইনফাসুল আরেফীন ১৮৯ পৃঃ মুলতান ছাপা)
→১৫) মির্জা হাসান আলী হানাফি লাখনৌভি রাহিঃ এ মাস'আলার বিষয়ে পৃথক একটি পুস্তিকা লিখেন- যাতে তিনি ইমামের পিছনে সূরা ফাত্বিহা পাঠকে হানাফি উলামা হতেই প্রমাণ করেন। (মিসকুল খিতাম শারহ বুলূগুল মারাম ১/২১৯ পৃষ্ঠা)
→১৬) শাহ্‌ আব্দুর রহীম রাহিঃ যিনি শাহ্‌ ওয়ালীউল্লাহ্ রাহিঃ-র পিতা ছিলেন। তিনিও ইমামের ইক্তিদায় (মুক্তাদি হয়ে) এবং জানাযার সালাতে সূরা ফাত্বিহা পাঠ করতেন। (ইনফাসুল আরেফীন ৬৯ পৃঃ)
★ বিঃদ্রঃ এ বিষয়ে শায়খের সাথে শায়খ আব্দুল আহাদ হানাফি রাহিঃ-র একটি ছোট মুনাজারাও হয়েছিল, আর শাহ্‌ আব্দুর রহীম রাহিঃ অত্যন্ত প্রজ্ঞাপূর্ণ আলোচনার দ্বারা এ বিতর্কে জয়ী হয়েছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ্‌
→১৭) শাহ্‌ ওয়ালীউল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী রাহিঃ লিখেছেন-
ঐসব বিষয় ছেড়ে দিলে সালাত দ্বিতীয়বার পাঠ করতে হয় যেসব বিষয়কে রাসূল সাঃ সালাতের রুকন সাব্যস্ত করেছেন। যেমন সূরা ফাত্বিহা ছাড়া সালাত হয়না। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২য় খন্ড, ৪ পৃঃ, আর ইমামের পিছনে ফাত্বিহা পাঠের পদ্ধতি বর্ণনা করেছেন ২/৯ পৃষ্ঠায়)

No comments:

Post a Comment

ইমামের পিছনে সূরা ফাতেহা পাঠ করা যাবে কি ?

ইমামের পিছনে সূরা ফাতেহা পাঠ করা যাবে কি ? দেওবন্দী শায়খুল হাদীছ সফদর খান এটা মেনে নিয়েছেন যে, হযরত উবাদাহ ইবনু সামিত রাযিঃ ইমাম...